মোবাইলে রিং বাজছে। সাইম হাতরে মোবাইলটা নিয়ে লাল রঙের বাটনে চাপ দিয়ে কলটা কেটে দিল। আবারো মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো। এবারো সাইম কলটা কেটে দিল। ৩য় বার আবার কল আসল। ঘুম ঘুম চোখে কলটা রিসিভ করে বলল,
_হ্যালো কে?
_কে মানে! আমি প্রজাপতি।
_কোন প্রজাতি?
_এবার কিন্তু বেশী বারাবারি হয়ে যাচ্ছে। প্রজাতি না প্রজাপতি। আর আজকে আমাদের দেখা করার কথা ছিল। আর তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো!
সাইমের ঘুম কিছুটা হালকা হল।
_ও প্রজাপতি তুমি? I am sorry বাবু। আচ্ছা আমি ১০ মিনিটের মধ্যে আসছি। ঠিক আছে।
প্রজাপতি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কলটা কেটে দেয়। সাইম তাড়াতাড়ি করে উঠে ফ্রেস হয়। তারপর গোছগাছ হয়ে নাঈমকে খুঁজতে থাকে। নাঈম হল সাইমের বন্ধু। পড়ালেখায় বেশ জিনিয়াস। বেশির ভাগ সময় একা একা উদাস মনে বসে থাকে। নাঈম এখন বারান্দায় বসে আছে। সাইম এসে বলল,
_নাঈম ১০০০টাকা দে।
নাঈমের কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে সাইম। অনেকক্ষণ রাস্তায় দাড়িয়ে থেকে একটা রিক্সা পেয়ে উঠে পড়ল তাতে। ঐদিকে প্রজাপতি তো রাগে পুরা পেট্রোল বোমা। একটু পরই বিস্ফোরিত হবে। আবার কল দেয় সাইমকে। এদিকে সাইম জ্যামে পইড়া বইসা আছে। ষ্ক্রীণে প্রজাপতির নাম দেখে ভয়ে ভয়ে রিসিভ করে। ওপাশ থেকে চিরচেনা কন্ঠ বলে ওঠে,
_ ১০মিনিটের জায়গায় ১ঘন্টা হয়ে গেল। কৈ তুমি?
সাইম তার একটা হাত উপরে তুলে ফোনে প্রজাপতিকে বলল,
_ তোমার পিছনে। আমার হাত দেখতে পাচ্ছো?
প্রজাপতি পিছন ফিরে সাইমকে না দেখতে পেয়ে,
_ কৈ দেখি না তো।
_ আসলে বাবু, আমি জ্যামের মধ্যে আটকা আছি। ৫মিনিটের মধ্যে চলে আসব। সত্যি।
_ কি! তুমি জ্যামে বইসা আমার সাথে মজা নিতাছ? থাক, তোমার আসার দরকার নাই। আমি চললাম। আর দেখা করব না।
_ বাবু আমার ক…টুট.টুট.টুট
সাইম প্রজাপতিকে কল করল। ওপাশ থেকে মধুর সুরে বলল, “আপনি যে নাম্বারে কল করেছেন,তা এই মূহুর্তে ব্যস্ত আছে..” রিক্সা থেকে নেমে হাঁটা শুরু করল। একটা গোলাপও কিনে নিল। কারণ গোলাপ প্রজাপতির খুব পছন্দের।
গোলাপটি পিছনে রেখে সাইম প্রজাপতির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রজাপতি অভিমানে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়। এবার সাইম প্রজাপতির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে গোলাপটি প্রজাপতির দিকে এগিয়ে দেয়। গোলাপটি দেখে প্রজাপতির রাগ কিছুটা কমে। সে গোলাপটি নিয়ে সাইমের গালে ঠাস করে একটা চড় দেয়। সাইম হতভম্ব। তারপর প্রজাপতি সাইমকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
_ তুমি খুব পঁচা। সবসময় আমাকে কাঁদিয়ে খুব মজা পাও তাই না!
_ আর এরকম হবে না। সরি।
_ চড়ে ব্যথা পাইসো?
_ একটু জোড়ে দিসো। সমস্যা নাই। tongue emoticon
তারপর দুজন দুজনকে ভালোবাসার আবেশে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
ঐদিকে শোভন। এও সাইম, নাঈমের বন্ধু। এরা তিনজন একসাথে থাকে। খুব মজবুত ফ্রেন্ডশীপ ওদের। শোভন রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। হঠাৎ করেই তার মনে হল মোবাইলে ব্যলেন্স নেই। রিচার্জ করা দরকার। তাই সে দোকানে গেল।
_ মামা একটা নাম্বার উঠাও। 01795443430 (কাল্পনিক) হুম মামা। ৫০টাকা দেও।
রাত হয়ে গেছে। সামিহাকে ফোন করতে যাবে।সে বুঝতে পারল মোবাইলে ব্যলেন্স নেই। অর্থাৎ দোকানদার এখনো টাকাটা পাঠায় নি।
আসলে সে বুঝতেও পারল না ভবিষ্যতে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে!
যা ভেবেছিল তাই হল। টাকা রং নাম্বারে চলে গেছে। দোকানদার ভুল শোনায় 4 এর জায়গায় 5 দিছে। যা গেছে তো গেছে। পুনরায় নাম্বার উঠাইয়া টাকা পাঠাইয়া দিল দোকানদার। বাষায় ফিরে খাওয়া-দাওয়া শেষে ছাদে গেল শোভন। ও ভাবল ঐ নাম্বারটাতে কল দিয়ে দেখি, টাকাটা পাওয়া যায় কি না। শোভন কল করল। ওপাশ থেকে মেয়েলী একটা কন্ঠ ভেসে এল। অপূর্ব একটা কন্ঠ।
_কি হল কথা বলছেন না কেন! কাকে চাই?
_ইয়ে মানে, আসলে সকালে মোবাইলে রিচার্জ করতে গিয়ে ভুল করে টাকাটা আপনার নাম্বারে চলে যায়।
_হুম। বুঝলাম। তো কি করব এখন!!
_আসলে আমরা ষ্টুডেন্ট। বুঝেনইতো, আমাদের এক টাকা হারালেও কষ্ট লাগে।
_নাম কি আপনার? কিসে পড়েন?
_শোভন। ইন্টার 2nd ইয়ার। আপনি?
_আমি সানিয়া। আমরা সেইম ইয়ার।
_ওহ! ভালোই তো।
_কাল বিকাল ঠিক ৫টায় কলেজের সামনে আসবেন। ঠিক আছে?
_o..ok.
আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ওরা। তারপরদিন বিকাল ঠিক ৫টায় শোভন ওদের কলেজের সামনে দাড়ায়। কিছুক্ষণ পর সানিয়া আসে।
_দুঃখিত। আসলে একটা কারণে দেরী হয়ে গেল।
_না না ঠিক আছে।
_চলুন ক্যাফে গিয়ে বসি।
শোভন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সানিয়ার দিকে। মায়াবী একটা চেহারা।
কিছুক্ষণ পর সানিয়াই নিরবতা ভেঙে কথা বলা শুরু করে। সানিয়া কফি খাচ্ছে। একটার পর একটা কথা বলছে আর হাসছে। শোভন যেন চোখ ফেরাতে পারছে না। এত সুন্দর হাসি যে কেউ এর প্রেমে পড়বে নিশ্চিত।
_কি ব্যপার কফি খাচ্ছেন না কেনো?
_ও হ্যাঁ, খাচ্ছি তো এই যে।
বলেই ষ্ট্রতে ঠোঁট লাগিয়ে লম্বা একটা চুমুক দিল।
_আচ্ছা আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে?
_ইয়ে মানে, না।
_হাহাহাহা মিথ্যা বলছেন কেনো?
_আজিব! মিথ্যা কেন বলব? রিয়েলি নাই। যেই না চেহারা তার উপর আবার গার্লফ্রেন্ড।
_ঠিক বলছেন। আপনাকে দেখতে গাধার মতই লাগে। হাহাহাহা
আবার সেই মন ভুলানো হাসি। শোভন মুচকি হাসি দিলো। তারপর আর কিছুক্ষণ কথা বলে সানিয়াকে বাষায় পৌছে দিয়ে শোভন বাষায় আসলো। রুমে ঢোকার সাথে সাথেই সানিয়ার কল।
_হ্যাঁ বলো।
_বাব্বাহ! আপনি থেকে তুমি?
_হুম। তুমিও আমাকে তুমি করে বলবা।
_হুম। বাষায় পৌছাইছ?
_হুম। তুমি ঠিকমত গেছো তো?
_হুম। আচ্ছা রাতে কথা হবে। আম্মু রুমে চলে আসছে। Bye. Take Care
_Bye. Take Care
রাত ১০টায় ছাদে উঠলো শোভন। একটা গোল্ডলীফ ধরালো। একটান দিয়ে ফেলে দিলো। আজ মনটা খুব ভালো তাই সিগারেট খাবে না।……………
“তোর জন্য আমি বণ্য, মাতাল অনুভব জুড়ে সব শুন্য…”
মৃদু শব্দে গানটা শুনছিল শোভন।হঠাৎ তার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠল। ডিসপ্লেতে সানিয়ার নাম ভেসে উঠেছে। শোভন রিসিভ করল।
_হ্যাঁ, ম্যডাম বলুন।
_কি করছ?
_এইত গান শুনছিলাম। তুমি?
_তোমার কথা ভাবছিলাম। হি হি
_হুম।
_এই বিকালে দেখা করতে পারবা?
_উমম.. দেখি।
_দেখি কেন!!
_ব্যস্ত থাকলে তো দেখা করতে পারব না।
_আমার সাথে দেখা করতে গেলেই সব ব্যস্ততা। হুহ হুহ
_আচ্ছা ঠিক আছে। দেখা করব।
_সত্যি! তুমি না..
_কি আমি?
_বলব না। হি হি
_ unsure emoticon
এরকমই চলতে থাকে ওদের খুনসুটি। একজনকে ছাড়া অন্য জন যেন এক মূহুর্ত থাকতে পারে না। এদিকে শোভন ওর মনের কথাটা বলতে গিয়েও সাহসে কুলায় না। তো একদিন শোভন ভাবল যে, আজকে সব বলবে সানিয়াকে। যা হবার হোক।
পার্কে বেঞ্চের ওপর দুজনে পাশাপাশি বসে আছে। শোভনই আগে কথা শুরু করল।
_সানিয়া একটা কথা বলার ছিল তোমাকে।
_হুম বল।
_I Love U, Sania.
মূহুর্তেই সানিয়ার হাসি মাখা মুখটা কালো মেঘে ঢাকা পড়ল। সানিয়া কিছু না বলেই উঠে চলে যায়। শোভনের ডাকে ফিরেও তাকায় না সে। শোভন হতবাক!
কথাটা বললে যে সানিয়া এইভাবে রাগ করে চলে যাবে, তা শোভন বুঝতে পারেনি। অনেক ফেরানোর চেষ্টা করেছে সানিয়াকে। কিন্তু সানিয়া শোভনের কোনো কথাই শুনলো না। হঠাৎ করেই বুকের ভেতর শুন্যতা অনুভব করল শোভন। কিছুই ভাবতে পারছে না। নিজেকে বড় একা মনে হচ্ছে।
এদিকে বাষায় ফিরে সানিয়া খুব কান্না করছে। তা দেখে ওর মা কান্নার কারণ জানতে চাইল। সানিয়া কিছুই বলল না। হঠাৎ করে শোভনের কল আসে সানিয়ার মোবাইলে। কিন্তু সানিয়া রিসিভ করে না। সানিয়ার মা কলটা রিসিভ করে।
_হ্যালো কে?
_আন্টি, আমি সানিয়ার বন্ধু। সানিয়াকে একটু দেবেন প্লীজ?
_বাবা, সানিয়াতো এখন কথা বলতে পারবে না।
_আন্টি, ওকে খুব দরকার।
_আচ্ছা বাবা তুমি তাহলে আমাদের বাষায় আসো।
_আচ্ছা আমি এক্ষুণি আসছি।
শোভন দ্রুত সানিয়াদের বাষায় চলে যায়। সানিয়া তখনো কাঁদছে। শোভন সবকথা খুলে বলে সানিয়ার আম্মুকে। চুপচাপ সব শোনে সানিয়ার আম্মু এবং শোভন লক্ষ্য করে যে তার চোখে পানি। শোভন কেমন যেন একটা রহস্যের মধ্যে পড়ল।
তারপর সানিয়ার আম্মু যা বলল। তা শুনে শোভন নির্বাক হয়ে গেল। আর সানিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
আন্টির কথাগুলো বিশ্বাস হচ্ছে না। কি করে সম্ভব এটা?
সানিয়ারো ছিল খুব সুন্দর সাজানো একটা জীবন। আর ছিল পথচলার একজন সঙ্গী। সানিয়া ছেলেটাকে খুব ভালোবাসত। ছেলেটাও সানিয়াকে ভালোবাসত। সবসময় একজন আরেকজনের পাশে থাকত। কেউ কাউকে চোখের আড়াল হতে দিত না। একদিন সানিয়া অসুস্থ্য হয়ে পড়ল। ডাক্তার জানালো তেমন কিছু না। কিন্তু এভাবে প্রায়ই প্রচন্ড মাথা ব্যথায় অসুস্থ্য হয়ে পড়ত সানিয়া। ডাক্তার এক্স-রে করার পর জানায় সানিয়ার ব্রেণের পাশে একটা টিউমার আছে। যেটা অপারেশণ না করালে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে অতিবাহিত হবে। অপারেশণ করাতে লাখ খানেক টাকা লাগবে। এত টাকা সানিয়ার পরিবার জোগাড় করতে পাড়বে না। যার সাথে সানিয়ার সারাজীবন থাকার কথা ছিল সেই আজ এই সমস্যার কথা জেনে সানিয়ার থেকে আস্তে আস্তে দূরে চলে যায়। ছেলেটার মুখ থেকেই সানিয়া তার অসুস্থ্যতার কথা প্রথম জানতে পারে। সানিয়া কথাটি মেনে নিতে পারেনি। সে ভেঙে পড়ে। তার পরিবার তাকে সবসময় হাসি-খুশী রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু সানিয়া তো জানে তার মৃত্যু বেশী দূর না। সেই থেকে সানিয়া তার অনিশ্চিত জীবনের সাথে কাউকে জড়াতে চায় না।………
কেমন হলো প্রিয় পাঠকগন
লিখা” “” নিল রহমান : collected